দক্ষ অভিনয়ের সহজ-সরল, সুন্দর গল্প "পিকু"


বাবা-মা আমাদের ছোট থেকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেন। বার্ধক্যে তাদের সেবা করাটা সন্তানের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সেবার সংজ্ঞাটা জনমত নির্বিশেষে এক নয়। কারো কাছে এর পরিসর ব্যাপক, কেউ বা কমিয়ে এনেছেন এর পরিধি। শুধু মাসশেষে কিছু টাকা আর দর্শন দিয়েই অনেকে দ্বায়িত্বে সারা দেন। কেউ হয়ত সে ফুরসুত টুকুও পায় না। আবার কেউ কেউ নিজের সুখ ভুলে জীবন উৎসর্গ করেন বাবা-মায়ের জন্য। শুধু ভালবাসি বললেই যেমন ভালবাসা হয়না, তেমনি সেবা করার ইচ্ছা থাকলেই সেবা করা যায় না। সেবা করতে জানতেও হয়। “A Separation” মুভিতে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবার কিছু সুস্পষ্ট উদাহরণ আমরা দেখেছিলাম। ‘PIKU” মুভিটাও মা-বাবার প্রতি আমাদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয়।

Movie Name: Piku (2015)
Director:  Shoojit Sircar
Writer: Juhi Chaturvedi

সম্প্রতি দেখে ফেললাম দীপিকা পাড়ুকোন, ইরফান খান ও অমিতাভ বচ্চন অভিনীত “পিকু” মুভিটি।এরআগে বেশ কয়েক জায়গায় মুভিটা নিয়ে পজিটিভ কমেন্ট দেখলাম। রেটিংও ভাল। অভিনয়ে ইরফান খানকে দেখেই ডাউনলোড দেয়া। বলিউড অভিনেতাদের মাঝে অতি পছন্দের একজন ইরফান খান। এমন জাত অভিনেতা থাকলে অন্য বাচ-বিচার না করেই মুভি দেখা যায়। সেইসাথে অমিতাভ বচ্চনের উপস্থিতি যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বিষয়টাকে আমি মনে হয় একটু ঘুরিয়েই বললাম। অমিতাভ বচ্চনই মুভির মূল চরিত্র, এবং এই ভদ্রলোক যে আসলেই কত বড়মাপের অভিনেতা সেটা আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন।


কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার “পিকু” (দীপিকা) কলকাতার বাঙালী মেয়ে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবাকে (অমিতাভ বচ্চন) নিয়ে মুম্বাইতে বসবাস। সত্তোর্ধ ভাস্কর ব্যানার্জি কন্সটিপেশনের (কোষ্ঠকাঠিন্য) রোগী। এ নিয়ে চলছে নানা চিকিৎসা। খাবার-দাবার, চলাফেরা, ঔষধপত্র সবকিছু চলে রুটিন মাফিক। আর এসব নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি একমাত্র মেয়ে পিকুর। কোথাও যেন কোনকিছুর পরিবর্তন না হয় সেদিকে তার কড়া নজর। কিন্তু বয়স্ক বাবার এত নিয়মকানুন কি আর ভাল লাগে?? নিয়মিত বিরতিতে অনিয়ম করেই যাচ্ছেন তিনি। বুয়ার ভুল ধরা, কন্সটিপেশন সারানোর নতুন নতুন ফর্মুলা, কলা-কৌশল আবিস্কার আর অন্যদের জ্ঞান দিয়েই কাটে তার পুরো সময়। কিন্তু সেগুলো যে কতটুকু কার্যকর তা দর্শনেই জানা যাবে।
ইরফান খান, ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবসার পৈতৃক মালিক। বাবার অবর্তমানে নিজেই ব্যবসার হাল ধরেছেন। পিকু অফিসে যাওয়া-আসার কাজে তার কোম্পানির ট্যাক্সি ভাড়া করে। বাসার উদ্ভট পরিস্থিতির কারণে পিকুর মেজাজ প্রায়সময় খিটখিটে থাকে। তার কিছু ঝাঁজ এসে পড়ে ড্রাইভারদের ওপর। ফলে ড্রাইভাররা তাকে এড়িয়ে চলে। তাই পিকু যখন তার বাবাকে নিয়ে কলকাতা যাওয়ার গাড়ি বুকিং দিল, ড্রাইভাররা সব চম্পট!! অগত্যা ইরফান খানকেই ড্রাইভার বনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা করতে হয়…



পিকু বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে। চারপাশ থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসলেও, বিয়ের পর স্বামীরবাড়ি চলে গেলে বয়স্ক বাবার দেখাশুনা করবে কে, এই ভেবে বিয়ের চিন্তা করছেনা। নিজের সন্তানের মত দেখাশুনা করছে বয়স্ক বাবার…
“পিকু” কমেডি-ড্রামা ঘরনার মুভি। গল্প সহজ-সরল, সুন্দর, চমৎকার। আসল আকর্ষণ এর উপস্থাপনায়। পরিচালক ছোটছোট বিষয়গুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত চমকপ্রদভাবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো জুগিয়েছে হাসির খোরাক। জোরকরে হাসানোর ছিলনা কোন ব্যর্থ প্রচেষ্টা। বাবা-মেয়ের খুনসুটিগুলোও ছিল উপভোগ্য।




ব্যক্তিগতভাবে দীপিকাকে খুব একটা ভাল লাগতনা। ওর মুভি দেখা হয়েছেও কম, অভিনয়ও সেভাবে লক্ষ্য কারা হয়নি। “ওম শান্তি ওম” আর রনবির কাপুরের সাথে “ইয়ে জাওয়ানি হে দিওয়ানি” মুভিটা দেখেছিলাম। এইমুভিতে অসামান্য অভিনয় করে দীপিকা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে নাচ ছাড়াও অভিনয়ে সে বেশ পারদর্শি।
বলা হয়ে থাকে, একটি মুভির সফলতার ৬০% নির্ভর করে এর অভিনয়ের ওপর। অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা আর ইরফান খানের মত বিচক্ষণ অভিনেতারা চরিত্রগুলোকে দিয়েছে বাস্তব রুপ। সে হিসেবে এটি অত্যন্ত সফল একটা মুভি।


মুভিটি অনলাইনে দেখুন নিচের লিংক থেকে।

No comments

Powered by Blogger.